আকাশপথের লড়াইয়ের বড় একটি অস্ত্র হলো যুদ্ধবিমানবাহী জাহাজ তথা এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার। এর মাধ্যমে যুদ্ধ বিমানগুলো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরকম একটি বিখ্যাত মার্কিন এয়ারক্রাফট হলো “কিটি হক”।
মার্কিন যুদ্ধবাহী বিমান বহনকারী “কিটি হক” জাহাজটি ভিয়েতনাম থেকে শুরু করে প্রথম ইরাক যুদ্ধ, আমেরিকার বহু রক্তক্ষয়ী সংঘাতের সাক্ষী। তবে যুদ্ধজাহাজটি সবেচেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছিল রাশিয়ার সঙ্গে শীতল যুদ্ধের সময়কালীন বিশেষ দক্ষতার কারণে। এমনকি রাশিয়ার সাবমেরিনের সামনে পড়েও দিব্যি মাথা উঁচু করে নির্বিঘ্নে নিজের যাত্রাপথ পাড়ি দিয়েছিল তা।
এ জাহাজটি বাতিল হয়েছিল আরও আগেই। এখন তা কেবল বর্জ্য হিসেবে বিক্রি হওয়ার অপেক্ষায়, সেটিও নামমাত্র মূল্যে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১ মার্কিন ডলারেরও কম মূল্যে এ বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ বিক্রি হচ্ছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা মাত্র ৮৬ টাকা।
১,০৪৭ ফুট দীর্ঘ এবং ২৫২ ফুট প্রশস্ত এ বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজটি ১৯৬০ সালে নিজের যাত্রা শুরু করে। উড়োজাহাজের আবিষ্কারক হিসেবে পরিচিত রাইট ভ্রাতৃদ্বয় উত্তর ক্যারোলিনায় কিটি হক এলাকায় সর্বপ্রথম সফলভাবে নিজেদের বিমানটি ওড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই সেই জায়গার নাম অনুসারেই এই জাহাজের নাম রাখা হয় “কিটি হক”।
যদিও “কিটি হক” নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যকার বর্ণ সংক্রান্ত হিংসারও প্রত্যক্ষ সাক্ষী। ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষে এ জাহাজ যখন ফিরে যাচ্ছিল, তখন ফিলিপাইনের এক পানশালায় বর্ণবিদ্বেষের কারণে নিজেদের মধ্যেই বিবাদে জড়ান নাবিকরা। শেষ পর্যন্ত তা হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়।
একসময় ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তির সব থেকে বড় নিদর্শন ছিল “কিটি হক” জাহাজটি। এ যুদ্ধজাহাজটিই সর্বশেষ তেলচালিত বিমানবাহী মার্কিন জাহাজ। এরপরের সব বিমানবাহী মার্কিন যুদ্ধজাহাজই চালনা করতে পরমাণু-শক্তি ব্যবহৃত হতো।
প্রায় ৫০ বছরের পরিষেবার পর অবশেষে ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিভাগ “কিটি হক”-কে বাতিল করে। জাহাজটি যুদ্ধবিমান বহন করার অযোগ্য মনে করেই এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিভাগের কাছে থেকে ১ ডলারেরও কম দামে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮৬ টাকা) টেক্সাসের ইন্টারন্যাশনাল শিপব্রেকিং লিমিটেড ব্রাউনসভিল এ বিখ্যাত যুদ্ধজাহাজটি কিনে নেয়। বর্তমানে এটি রাজধানী ওয়াশিংটন থেকে ১৬ হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে টেক্সাসের পথে যাত্রা করছে।
বৃহদাকারের কারণে “কিটি হক” পানামা খাল পেরোতে পারবে না। তাই দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলীয় তট বরাবর এই জাহাজ মেক্সিকো দিয়ে টেক্সাসে প্রবেশ করবে। সেখানে নিয়ে জাহাজটিকে ভেঙে ফেলার মাধ্যমেই এটির যাত্রার যবনিকা টেনে দেওয়া হবে।
Leave a Reply